সূরা ইখলাস বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ আমল গুরুত্ব ও ফজিলত

সূরা ইখলাস

সূরা ইখলাস এর শব্দার্থঃ

قُلْ (কুল)- বলুন, هُوَ اللَّهُ (হুয়াল্লাহু)- তিনি আল্লাহ, أَحَدٌ (আহাদ)-এক।
اللَّهُ (আল্লাহু)-আল্লাহ, الصَّمَدُ (সামাদ)-অমুখাপেক্ষী।
لَمْ (লাম)-না/নি, يَلِدْ (ইয়ালিদ)- জন্ম দেয়া, وَلَمْ (ওয়ালাম)-এবং না/নি, يُولَدْ (ইউলাদ)- জন্ম নেয়া।
وَلَمْ (ওয়ালাম)-এবং না/নি/নেই, -يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ (ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ)-তার সমতুল্য কেউ।

উচ্চারণ ও বঙ্গানুবাদঃ সূরা ইখলাস

গুরত্ব ও ফজিলতঃ সূরা ইখলাস

আকার ও আয়তনে কোরআন শরীফের একটি অত্যান্ত ছোট সূরা ইখলাস। কিন্ত ফজিলত এবং মর্যাদার বিচারে অনেক বড় ও মাহাত্ম্যপূর্ণ।

সহিহ বুখারীর ছয় হাজার আট শত সাতষট্টি নাম্বার হাদিসে বলা হয়েছে। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার একজন সাহাবী কে কিছু লোকের মতো দায়িত্বশীল করে পাঠালেন।

তিনি যতদিন তাদের মাঝে অবস্থান করেছেন। ততদিন প্রত্যেক ওয়াক্তে নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ইখলাস আবশ্যিক ভাবে তেলাওয়াত করতেন। এটা তার কাছে একটি নিয়ম হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছিল।

বিষয়টি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নজরে আনা হল। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারণ জানতে চাইলেন। ব্যক্তিটি উত্তরে বললেন সূরাতুল ইখলাস হল সিফাতুর রহমান।

সিফাতুর রহমান মানে শুধুমাত্র আল্লাহর গুণের আলোচনায় করা হয়েছে। এই সূরার আলোচ্য বিষয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। আল্লাহর গুনের আলোচনা ছাড়া অন্য কোন আলোচনাই এই সূরায় করা হয়নি। এই সূরায় শুধুমাত্র তাওহীদের আলোচনা করা হয়েছে। যার কারণে এই সূরাটি আমার ভালোলাগা এবং ভালোবাসা কাজ করে।

সেজন্য প্রতি রাকাতের এই সূরা তেলাওয়াত না করে আমি থাকতে পারি না। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে বললেন, এই সূরার প্রতি ভালোবাসার কারণে স্বয়ং আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসে।

সহিহ বুখারীর সাত শত আটাত্তর নং হাদিস এর বর্ণনা এসেছে। একজন ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, আমি সূরা ইখলাস কে ভালবাসি। উত্তরের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সুুরা ইখলাসের ভালোবাসা তোমাকে জান্নাত পর্যন্ত নিয়ে যাবে।

বুখারী শরীফের সাত হাজার তিন শত চুয়াত্তর নং হাদীসে এসেছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা ইখলাসের ফজিলত সম্পর্কে বলেছেন যে, এই সুরা ইখলাস হল “তায়ালু দিলুফুলুফাল কুরআন”। তায়ালু দিলুফুলুফাল কুরআন অর্থ কোরআন শরীফের এক তৃতীয়াংশের সমমান। যা কোরআন শরীফের তিন ভাগের এক ভাগের সমমান।

এই কথাটির ব্যাখ্যায় অনেক আলেমগণ বলেছেন যে। কোরআন শরীফের আলোচ্য বিষয় হল তিনটি। তার ভেতর থেকে একটি হল তাওহীদ। যেহেতু সূরাতুল ইখলাসে তাওহীদ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তাই এই সূরাকে কুরআন শরীফের এক-তৃতীয়াংশ বা তিন ভাগের এক ভাগের সমান বা কোরআন শরীফের তিনটি বিষয়বস্তুর একটি বিষয়বস্তু সম্বৃদ্ধ সুরাহ বলা হয়েছে।

আবার কিছু কিছু আলেমের মতে এই সূরা একবার পাঠ করলে এক তৃতীয়াংশ কোরআন শরীফ পাঠ করার সওয়াব পাওয়া যায়। যাকে সম্পন্ন কুরআন তিলাওয়াত তিন ভাগের একভাগ বলা হয়। সেই হিসেবে কেউ যদি ৩ বার সূরা ইখলাস পাঠ করে তাহলে সে সম্পুর্ণ কোরআন শরীফ পাঠ করার সওয়াব পাবে। সুরা ইখলাস একবার বা তিনবার তিলাওয়াত করা সহিহ হাদিস হিসেবে গণ্য।

অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত পাঠ করলে যে সওয়াব হয় সূরা ইখলাস তিনবার পাঠ করলে তার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে। তবে কষ্ট করে কুরআন শরীফ সম্পূর্ণ পাঠ করলে যে মর্যাদা পাওয়া যাবে সুরা ইখলাস তিনবার পাঠ করলে মর্যাদা তার সমান পাওয়া যাবে না। উক্ত হাদীস দ্বারা সুরা ইখলাসের মর্যাদা ও গুরুত্বের কথা প্রমাণিত হয়।

সূরা ইখলাস সম্পর্কে কিছু ধারণাঃ

মুসনাদে আহমদ গ্রন্থে একটি হাদীস বর্ণিত আছে। যে ব্যক্তি সূরা ইখলাস দশ বার পাঠ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন। এই হাদীসের সনদ সম্পর্কে সেখ আল বানিই (রঃ) সহিহ হিসেবে মন্তব্য করেন। কিন্তু তৎকালীন যুগের অনেক মুহাদ্দিস এই হাদিসকে দায়ীব বা ভিত্তিহীন হিসেবে মন্তব্য করেছেন।

ফেছবুক, ইউটিউব বা ব্লগে এর তিলাওয়াতের অনেক প্রকার লোভণীয় ফজিলত লেখা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন হাদীসে পাওয়া যায় যে, সূরা ইখলাস একবার, দুইবার, পাঁচবার, দশবার, বারোবার, পঞ্চাশ বার, একশত বার, দুইশত বার, পাঁচশত বার, এক হাজার বার পাঠ করলে অমুক তমুক সওয়াব পাওয়া যায়। যেমনঃ

  • একটি হাদিসে বর্ণনা আছে; হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেকদিন ৫০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করবেন, মহান আল্লাহ তায়ালা তাহার ৫০ বছরের গুনাহ মাফ করবেন তবে বান্দার ঋণের কথা থাকবে স্বতন্ত্র।
  • উক্ত সুরা সম্পর্কে অন্য একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি নিদ্রার সময়ে বিছানায় ডান কাতে শুয়ে একশ বার সূরা ইখলাস পাঠ করবেন, মহান আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন স্ব-সম্মানে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।
  • হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মৃত্যু শয্যায় সূুরা ইখলাস পাঠ করবে মহান আল্লাহ তা’আলা তাঁর মৃত্যুর যন্ত্রনা হতে রক্ষা করবেন।
  • যে ব্যক্তি বাড়িতে প্রবেশ করার সময় সুরা ইখলাস পাঠ করবে মহান আল্লাহ তাআলার অভাব অনটন দূর করবেন।
  • মিশকাত শরীফের একটি হাদিসে বর্ণনা আছে, যে ব্যক্তি সূরা ইখলাস ১০০ বার পাঠ করবে, মহান আল্লাহ তা’আলা তাঁর ১০০ বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।

কিন্তু এই সকল হাদীসকে মুহাদ্দিসগণ জাল বা ভিত্তিহীন হাদিস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আবার কিছু কিছু কথার কোন হাদিস পাওয়া যায় না। আর যেগুলো পাওয়া যায়, সে গুলোকে মুহাদ্দিসগণ দায়িব হিসেবে মন্তব্য করেছেন।

যদিও এ রকম কোন লোভণীয় ফজিলত নেই। তবুও এই সূরার গুরত্ব ও ফজিলত অনেক। তাই আমরা এই সূরা বেশি বেশি পাঠ করব।

শেষ কথাঃ

সুরা ইখলাসের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। যা অনেক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। অতএব এই সূরা যত বেশি সংখ্যক বার সম্ভব তেলাওয়াত করার চেষ্টা করব। কেননা এই সূরার গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক।

এই সূরার গুরুত্ব, মর্ম ও মহত্ব নিজেদের ভেতর ধারণ করার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়াও এই সূরা সকালে তিনবার সন্ধ্যায় তিনবার প্রতি ফরজ নামাযের শেষে এবং রাত্রে ঘুমানোর আগে তেলাওয়াত করলে অনেক সওয়াব লাভ করা যায়।

নবীনতর পূর্বতন