কবরের আজাব - পাপী ব্যক্তির কবরের কঠিন শাস্তি

কবরের জীবন ও কবরের আজাব কেমন হবে? আপনারা কি জানেন কবর জীবন ও কবরের কঠিন আজাব সম্পর্কে?

এই পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে, তা একদিন অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাবে। যার জীবন আছে তাকে একদিন অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তাই আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ অবশ্যই একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।

কবর জীবন

মৃত্যুর পর মানুষের একমাত্র ঠিকানা হবে কবর। এই কবরের মাঝেই মানুষকে শুয়ে থাকতে হবে অনন্ত কাল। কবরের মাঝে মানুষের একমাত্র সাথী হবে সাদা ধবধবে কাফনের কাপড়। তবে পুণ্যের কাজ করে যারা কবরে যাবে তাদের কবরের আজাব কম হবে।

কবরে প্রথম রাত

আপনি কি জানেন? কেমন হবে কবরে আপনার প্রথম রাত?

এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, কবরে মৃত ব্যক্তির কাছে মুনকার নাকিরের আগে কোন ফেরেশতা আসবেন কিনা?

রাসুলুল্লাহ বলেন, সূর্যের মতো উজ্জ্বল একজন ফেরেশতা এসে মৃত ব্যক্তিকে জাগ্রত করবেন।

পাপ ও পুণ্যের হিসাব

সেই ফেরেশতা মৃত ব্যক্তিকে তার পাপ পুণ্যের হিসাব লিখতে বলবেন। মৃত ব্যক্তি বলবেন, আমার কাছে তো লেখার মত কাগজ-কলম কিছুই নেই।

ফেরেশতা বলবেন, তোমার হাতের আংগুল কে কলম, মুখে থুতু কে কালি আর কাফনের এক টুকরা কাপড় কে খাতা বানাও।

মৃত ব্যক্তি তার জীবনের ভালো কাজগুলোর স্বাচ্ছন্দে লিখবে আর মন্দ কাজ গুলো লিখতে লজ্জা পাবে।

ফেরেশতা বলবেন, পৃথিবীতে খারাপ কাজ করতে লজ্জা লাগেনি? এখন লজ্জা লাগছে কেন? এই কথা বলে ফেরেশতা টি আক্রমণ করতে চাইবে।

এরপর ঐ ব্যক্তি তার সকল খারাপ কাজ লিখে দেবেন। এরপর ফেরেশতার কথামতো তার মুখ দিয়ে কাগজের মহর আকৃতি মেরে দিবেন।

আমলনামা

ফেরেশতা টি ভালো ও খারাপ কাজের খাতা গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে চলে যাবেন। এই পাপ-পুণ্যের খাতা তার গলায় মহাপ্রলয় পর্যন্ত ঝুলতে থাকবে।

আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনে বলেন, “আমি প্রত্যেক মানুষকে তার আমলনামা গলায় ঝোলানো ব্যবস্থা করেছি।”

ভয়াবহ কবরের জীবন

ফেরেশতা টি চলে যাবার পর মানুষের আত্মা বলতে থাকবে, ” আমি কোথায়? এত অন্ধকার কেন? আমি কি অন্ধ হয়ে গেছি?”

এরপরেই পাপিষ্ট ব্যাক্তির কবরে আগুন জ্বলে উঠবে। ওই ব্যক্তির আত্মা তখন খুব কান্নাকাটি করবে ও কষ্ট পাবে। চিৎকার করে বাঁচানোর জন্য কান্নাকাটি করবে।

কবরের প্রশ্ন ও উত্তর

কবরে মুনকার নেকির এসে প্রশ্ন করবে, ” মান রাব্বুকা ও মান দিনুকা ও মান হাজার রাজুল?”

নেককার ব্যক্তির আত্মা উত্তর দেবে, ” রাদিতু বিল্লাহি রাব্বা ওয়া বিল ইসলামি  দ্বীন ওয়াবি মুহাম্মাদিন নবী ওয়া রাসুলান সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম”

পাপী ব্যক্তির আত্মা উত্তর দেবে, ” হায়! হায়! আমি তো কিছু জানিনা। আমার রব কে? আমার ধর্ম কি? আমার নবীকে?”

পাপী ব্যক্তির কবর

পাপী ব্যক্তি কবরকে তখন জাহান্নামে রূপান্তরিত করা হবে। সে কবর জীবন থেকেই জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। কবরের ভেতর চলবে তার ভয়ঙ্কর শাস্তি।

ভয়ঙ্কর ও বিষাক্ত সাপ, টগবগে আগুনসহ জাহান্নামের প্রায় সকল আজাবই থাকবে তার কবরে। তারে কবরের আজাব চলতে থাকবে অনন্তকাল পর্যন্ত।

পাপি ব্যক্তির আজাব সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ” আমি তাদের দুইবার শাস্তি প্রদান করব; একবার কবরে আরেকবার জাহান্নামে।”

কবরের প্রথম আজাব

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন কবরে বিভিন্ন প্রকার আজাব হয়ে থাকে। তার মধ্যে সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে হালকা আজাব হলো, মৃত ব্যক্তিকে কবর দিয়ে মাটি দ্বারা ঢেকে দেওয়া মাত্রই; কবরে দুই পাশে মাটি মৃত ব্যক্তি কে এমন ভাবে চাপ দেয় যে, মৃত ব্যক্তির হাড়মাংস একেবারে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।

সাহাবীগণ রাসুলুল্লাহ কে জিজ্ঞেস করলেন, এই চাপ কি সবার কবরেই হয়ে থাকে? উত্তরে বললেন, “হ্যাঁ, এটা সবার জন্যই অপরিহার্য।”

এই কথা শুনে সাহাবীগণ কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমাদের কি উপায় হবে? এমন সময় জিবরাঈল (আ) নবী করীম (সা) কে বললেন, যে ব্যক্তি জুম্মার দিন নির্দিষ্ট নিয়মে নফল নামাজ পড়বে তার কবরে এমন মাটির চাপ হবে না। এই কথা শুনে সাহাবীরা একটু আশ্বস্ত হলেন।

শেষ কথা

তাই আমাদের সবসময় আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের পথে চলতে হবে। ইসলামকে আমাদের ধর্ম আর কোরআন ও হাদীসের কথা কে মেনে চলতে হবে।

খাঁটি মুসলমান ঈমানদার না হয়ে কবরে যাওয়া যাবেনা। কবরের আযাব অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। আজ আমরা দুনিয়ার মোহে সবাই আসক্ত।

কিন্তু ভাই কবরের জীবন অত্যন্ত কঠিন জীবন। কবরে থাকতে হবে মহাপ্রলয় বা কিয়ামত পর্যন্ত।

তাই আমাদের উচিত ইসলামের পথে চলে ও ভাল আমল করে কবরে যাওয়া। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন

নবীনতর পূর্বতন