সম্পর্ণ কুরআন মাজীদের গুরুত্বপূর্ণ সূরা হল সূরা ফাতিহা। পবিত্র কুরআনের সূচনা হয়েছে এ সূরার মাধ্যমেই।
এ সূরা কে আল কুরআনের সার সংক্ষেপ বা সারমর্মও বলা হয়। মানুষের সার্বিক কল্যাণ মুক্তি ও পথপ্রদর্শক হিসেবে এ সূরা অবতীর্ণ হয়েছে।
গুরত্ব, ফজিলত ও বৈশিষ্ট্যের দিক অন্য সব সূরা থেকে আলাদা সূরাটি।
সূরা ফাতিহার বৈশিষ্ট্য
- সূরা আল ফাতিহা কুরআনের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ও অন্যতম একটি সূরা। তাওরাত, যাবুর, ইংজিল ও কুরআনসহ সকল কিতাবে এই সূরার তুলনীয় কোন সূরা নাই (বুখারি, মিশকাত)।
- সূরা আল ফাতিহা এবং সূরায়ে বাকারা’র শেষ তিনটি আয়াত হল আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত বিশেষ নূর, যা ইতিপূর্বে কোনো নবীকে দেওয়া হয় নি। (মুসলিম শরীফ)
- তার সালাত অপূর্ণাঙ্গ, যে ব্যক্তি নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করল না। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ কথা টি তিন বার বলেছিলেন। (মিশকাত)
- এক সফরে আমাদের এক সাথী জনৈক গোত্রপতি কে শুধুমাত্র সূরা আল ফাতিহা পড়ে ফুঁ দিয়ে সাপের বিষ ঝাড়েন এবং তিনি সুস্থ হয়েছিলেন। (বুখারি শরীফ)
- সূরা আল ফাতিহার একটি বিশেষ মর্যাদা হলো, আল্লাহ এই সূরাটিকে নিজের ও নিজের বান্দার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন।
- এই সূরা বাদ দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব নয়। সে কারণে এই সূরার নাম দেয়া হয়েছে ‘উম্মুল কুরআন’ বা কুরআনের জননী/মাতা।
- পবিত্র কুরআন মূলত তিনটি বিষয়ে দ্বারা বিন্যস্ত। ১। তাওহীদ, ২। আহকাম ও ৩। নছীহত।
- সূরা ইখলাছে ‘তাওহীদ’ পূর্ণাঙ্গভাবে থাকার কারণে তা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু সূরা আল ফাতিহায় তিনটি বিষয় একত্রে থাকার কারণে তা ‘উম্মুল কুরআন’ বা কুরআনের জননী বা কুরআনের মাতা হওয়ার মহা উত্তম মর্যাদা লাভ করেছে। (তাফসীরে কুরতুবী)
ফাতিহার ফজিলত
সূরা আল ফাতিহার ফজিলত অপরিসীম। এই সূরার ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত আছে। কয়েকটি নিন্মরূপঃ
উবাই ইবনু কা‘ব (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন। আল্লাহ উম্মুল কুরআনের (কুরআনের জননী বা সূরা আল ফাতিহা) মত তাওরাত ও ইনজিলে কিছু নাযিল করেন নি।
এটিকেই বলা হয় ‘আস-সাব‘উল মাছানী’ (বারবার পঠিত সাতটি বাক্য বা আয়াত), যাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। আর আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, সে যা চাইবে’। (নাসায়ী শরীফ)
আবু হুরায়রা রা. হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা সূরা আল ফাতিহা পড়।
বান্দা বললে, “আলহামদু……..আলামীন”, আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে।
যখন বলে, “আর রাহমানির রাহীম”, আল্লাহ তথন বলেন, আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে।
যখন বান্দা বলে, “মালিকি ইয়াউমিদ্দীন”। আল্লাহ সে সময় বলে, আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করেছে।
যে সময় বান্দা বলে, “ইয়্যা কানা বুদু ওয়া ইয়্যা কানাস্তাইন”, আল্লাহ বলেন, এ হচ্ছে আমার ও আমার বান্দার মাঝের কথা।
আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়।
বান্দা যখন বলে, ইহ দিনা “সিরাতাল মুস্তাকিম..”। আল্লাহ সে সময় বলেন, এসব হচ্ছে আমার বান্দার জন্য। (মুসলিম শরীফ)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে জিবরাঈল (আ.) উপস্থিত ছিলেন।
হঠাৎ জিবরাঈল (আ) ওপর দিকে এক শব্দ শুনতে পেলেন এবং চক্ষু আকাশের দিকে করে বললেন, এ হচ্ছে আকাশের একটি দরজা যা আগে কোন দিন খোলা হয়নি।
উক্ত দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে এসে বললেন, আপনি দু’টি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন।
যা আপনাকে প্রদান করা হয়েছে। তা আপনার আগের কোন নবী এ রাসুল কে প্রদান করা হয় নি।
তা হচ্ছে (এক) সূরা ফাতিহা এবং (দুই) সূরা বাকারার শেষ দু’আয়াত। (মুসলিম শরীফ)
সূরা ফাতিহার বিশেষত্ব
রাসুলুল্লাহ (সা) এর নবুয়ত পাপ্তির শুরুর দিকে সূরা ফাতিহা একসাথে নাজিল হয়। নামাজে এই সূরা পড়া বাধ্যতামূলক।
সূরা ফাতিহা পড়া ছাড়া নামাজ পরিপূর্ণ হয় না। সূরা ফাতিহা একসঙ্গে নাজিল হওয়া পূর্ণাঙ্গ সূরা।
এ সূরাটি মানুষের অন্যতম দোয়া ও শেফা। সূরা ফাতিহার আমলে রয়েছে চমৎকার ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য।
সূরাটি বিশুদ্ধভাবে শেখার সুবিধার্থে উচ্চারণসহ এর আমল ও ফজিলতগুলো তুলে ধরা হলো। এই সূরা হলো মুমিন মুসমানের জন্য সব ধরনের দোয়া।
আল কুরআন পড়া শুরু করলেই সবাইকে এই সূরা পাঠ করেই শুরু করতে হয়। এই সূরাহ যেমন উম্মুল কুরআন, তেমন এটা কুরআনের ভূমিকাও বলা হয়।
সূরা ফাতিহার আমল
সূরা ফাতিহা সব রোগের মহৌষধ। এ সূরা আমলের ব্যাপার (সা) সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। সূরা ফাতিহার আমলের অন্যতম আমল হলো-
- হজরত জাফর সাদেক (রা) বর্ণনা করেন, সূরা ফাতিহা ৪০ বার পাঠ করে পানির উপর দম করে যে কোন জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির মুখে ছিঁটিয়ে দিলে, এ সূরার বরকতে আল্লাহ তা’আলা জ্বর ভাল করে দেন।
- ফজরের সুন্নত ও ফরজ নামাজের মাঝে যে কোন সময়ে ৪১ বার সূরা ফাতেহা পড়ে চোখে ফুঁ দিলে চোখের ব্যাথা ঠিক হয়।
- শেষ রাতের দিকে সূরা ফাতিহা ৪১ বার পড়লে আল্লাহ তা’আলা বান্দার রিযিক বৃদ্ধি করে দেন।
- চল্লিশ দিন নিয়মিত সূরা ফাতিহা পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে অসুস্থ ব্যক্তিকে পান করালে আল্লাহ তা’আলা ওই ব্যক্তির অসুস্থতা ভাল করে দেন।
- কেউ সূরাটি গোলাপ, জাফরান এবং কস্তুরি দিয়ে চিনির রেকাবিতে লিখে তা পানি দিয়ে ধুয়ে ৪০ দিন পান করালে রোগী সুস্থ হয়ে যায়।
- দাঁতের ব্যথা, পেটের ব্যথা, মাথা ব্যথার জন্যে সাত বার এ সূরা পাঠ করে দম করলেই আল্লাহ তা’আলা এসব ব্যথা ঠিক করে দেন।
সূরা ফাতিহার প্রমাণিত আমল
যে কোন রোগে এই সূরার আমল কার্যকরী। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে
হজরত ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন, এক বার সাহাবাদের একটি দল পানির জন্য এক পানির কুপ ওয়ালার কাছে গেলেন। সে সময় কুপ ওয়ালাদের একজন কে বিচ্ছু অথবা সাপে দংশন করেছিল।
কুপ ওয়ালাদের মধ্যে হতে এক ব্যক্তি এসে বলল, আপনাদের মধ্যে কোন মন্ত্র জানা লোক আছে কি? এই পানির কাছে বিচ্ছু/সাপে দংশন করা একজন ব্যাক্তি আছে।
সাহাবাদের মধ্য থেকে হজরত আবু সাঈদ খুদরি গেলেন এবং কয়েক টি ভেড়ার বিনিময়ে তার উপর সূরা ফাতিহা পড়ে ফুঁ দেন।
এতে সাপ কিংবা বিচ্ছুর দংশনে আক্রান্ত ব্যক্তি ভাল হয়ে গেল এবং তিনি ভেড়াগুলো নিয়ে সঙ্গীদের কাছে আসলেন।
সাহাবাগণ এটা অপছন্দ করে বলতে লাগল, আপনি কি আল্লাহর কিতাবের বিনিময় গ্রহণ করলেন?
অবশেষে তারা মদিনায় পৌঁছে বিশ্ব নবিকে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি আল্লাহর কিতাবের বিনিময় গ্রহণ করেছেন।
তখন রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, তোমরা যেসব জিনিসের বিনিময় গ্রহণ করে থাক, তার মধ্যে আল্লাহর কিতাব অধিকতর উপযোগী।
অন্য বর্ণনায় আছে রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, তোমরা ঠিক করেছ। ছাগলের একটি ভাগ আমার জন্য রাখ।
সূরা ফাতিহা বাংলা অর্থ সহ উচ্চারণ
১। اَلۡحَمۡدُ (আল হামদু) সমস্থ প্রশংসা لِلّٰهِ (লিল্লাহি) আল্লাহ্রই জন্য رَبِّ (রব্বিল) রবের ٱلْعَٰلَمِينَ (আ’লামিন) সারা জগতের | ২। ٱلرَّحْمَٰنِ (আর লহমানির) অশেষ করুণাময় ٱلرَّحِيمِ (রহিম) পরম দয়ালু |
৩। مَٰلِكِ (মালিকি) অধিপতি يَوْمِ (ইয়াওমিদ) দিনের ٱلدِّينِ (দিন) বিচারের | ৪। إِيَّاكَ (ইয়াকা) আপনারই শুধু نَعْبُدُ (না’বুদু) আমরা ইবাদত করি وَإِيَّاكَ (ওইয়াকা) এবং আপনারই (কাছে শুধু) نَسْتَعِينُ(নাসতাইন) আমরা সাহায্য চাই। |
৫। ٱهْدِنَا (ইহদিনা) আমাদেরকে দেখান ٱلصِّرَٰطَ (সিরাত) পথ ٱلْمُسْتَقِيمَ (মুসতাকিম) সরল সঠিক | ৬। صِرَٰطَ (সিরাত) (সেই) পথে ٱلَّذِينَ (আল্লাজিনা) যাদেরকে أَنْعَمْتَ (আনআমতা) আপনি অনুগ্রহ দান করেছেন عَلَيْهِمْ (আলাইহিম) তাদের উপর |
৭। غَيْرِ (গয়রিল) নয় (পথ) ٱلْمَغْضُوبِ (মাগদুবি) অভিশপ্তদের عَلَيْهِمْ (আলাইহিম) যাদের উপর (গজব পড়েছে) وَلَا (ওয়ালা) এবং না ٱلضَّآلِّينَ (দল্লি”ন) পথভ্রষ্টদের | আমিন |