নিরামিষ সবজি রান্না রেসিপির ইতিহাস
হিন্দুদের বিশেষ করে পূর্ব বাংলার হিন্দু সমাজে প্রচলিত জনপ্রিয় নিরামিষ জাতীয় অন্যতম একটি খাবার নিরামিষ সবজির রেসিপি। লাবড়া সবজির উৎপত্তি স্থল সম্পর্কে জানা যায় এটা একটি অবিভক্ত বাংলার পূর্ব বাংলার হিন্দু সমাজে পরিবেশিত খাবার।
তৎকালীন সময়ে নিরামিষ সবজির রেসিপি প্রধান উপকরণ ছিল মিষ্টি কুমড়া, লাল আলু বা রাঙালু, আলু, মান বা কচু জাতীয় উপকরণ, কাঁচা কলা, বিচেকলার থোড় বা কাদাল, বেগুন ও সিম।
সে সময়ে লাবড়া সবজি কে লাফরা সবজিও বলা হত।
বৈষ্ণব সাহিত্যে লাবড়া সবজিরে রেসিপি পাওয়া যায়। । উক্ত সাহিত্যের চৈতন্যচরিতামৃত তে মধ্যলীলা এর ষষ্ঠ ও দ্বাদশ পরিচ্ছেদে লাফরাবো নিরামিষ সবজির উল্লেখ আছে।
চৈতন্যদেব পূর্ব বাংলরে হিন্দু হওয়ায় তার খুব প্রিয় ছিল এই লাফড়া। সত্তর দশকে বাঙালি হিন্দু বিয়েতে লাবড়ার ব্যপক প্রচলন ছিল। এখন আর বিয়ে বাড়িতে লাবড়ার প্রচনল নেই বললেই চলে।
তবে বিভিন্ন ঠাকুর পরিবারে নিরামিষ ভোগ হিসাবে এবং বাংলার হিন্দুদের ঘরোয়া রান্নায় প্রচলিত খাবার এই রেসিপি।
নিরামিষ সবজি বা লাফরা শব্দটি অলাবু হতে লাবু, এরপরে এর সাথে 'ড়া' যুক্ত হয়ে নিরামিষ সবজি শব্দটি উৎপন্ন হয়েছে। লাবড়া শব্দটি পূর্ব বাংলার হিন্দুরা মূলত বেশি ব্যবহার করত, তবে এখন লাফরার চেয়ে লাবড়াই বেশি পরিচিত।
খাবার তালিকায় লাবড়া রেসিপি
পুজার দিনে নিরামিষ সবজি রেসিপি তৈরি হয় অনেক ঘরে। এটা মুলত নিরামিষ পদের রেসিপি। রেসিপিটি রান্না করতে লাগবে নানা রকম দেশিয় সবজি।
নিরামিষ জাতীয় খাবার হলেও হলেও বেশ সুস্বাদু ও পুষ্টিমানে ভরা এই খাবার। তাই আমিষ ভোজীদেরও ব্যাপক পছন্দের খাবার এই রেসিপি।
মাছ কিংবা মাংসের ভিড়ে একটু সবজিও খেতে ইচ্ছা হয় সবার। সবজির মধ্যে লাবড়া না হলে কি চলে? সাধারণত বিভিন্ন প্রকার সবজি মিলিয়ে নিরামিষ সবজি বানানো হয়।
লাবড়ার সাথে সংযুক্ত খাবার
নিরামিষ বাংলার মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি খাবারে। ঘরে আমাদের নানা অনুষ্টানেতে খিচুড়ির সাথে এই সবজি টা করে থাকি । তাছাড়া শনিবার ও মঙ্গলবার যারা পুরো নিরামিষ খাবার খান তখনও এটা করে থাকি ।
ভাত, ডাল আর এই রকম নিরামিষ সবজির তরকারি বাঙালির একটা জনপ্রিয় খাবার । তবে এটা কিন্তু পরোটা, রুটি, লুচি ইত্যাদির সাথে পরিবেশন করা হয়।
লাবড়া সবজি নানা লোকে নানা ভাবে রান্না করেন। তবে সহজেই ও সুস্বাদু লাবড়া রান্নার রেসিপি এখন দেওয়া হলো।
৮ জনের জন্য উপকরণ
আলু ৩০০ গ্রাম
পটল ২০০ গ্রাম
চাল কুমড়া ৩০০ গ্রাম
বেগুন ২০০ গ্রাম
মিষ্টি কুমড়া ২০০ গ্রাম
পেঁপে ২০০ গ্রাম
টমেটো ২ টি
ধনেপাতা ২৫ গ্রাম
শুকনা মরিচ ৪/৫ টি
হলুদ গুড়া ২০ গ্রাম
পাঁচফোড়ন ০৫ গ্রাম
জিরা বাটা ১০ গ্রাম
ধনে গুড়া ০৫ গ্রাম
তেল ১০০ গ্রাম
পাঁচ ফোড়ন ১০ গ্রাম
লবণ ০৫ গ্রাম
মরিচ গুড়া ১০ গ্রাম
চিনি সামান্য পরিমাণ
নোটঃ সবগুলো সবজি দিতে হবে এমন কোন কথা নেই। আবার উপরের উল্লেখ করা ছাড়াও আরো সবজি দিয়া যেতে পারে। সম্পন্ন রেসিপি নির্ভর করবে আপনার উপর।
নিরামিষ সবজির প্রস্তুত প্রণালী
সব সবজি খোসা ছাড়িয়ে তিনকোনা বা চৌকা করে কেটে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। কিছু সবজি আগে ধুয়ে নিতে হয় কাটার পরে ধোয়া উচিৎ না। যেমন ঢেড়ষ। আবার সব সবজি কাটার পর ধোয়া যাবে না। কিছু কিছু সবজি ছোলার পর ধুয়ে নিতে হবে
প্রথমে একটা শুকনো কড়াই নিয়ে তার মধ্যে আস্ত ধনে, আস্ত জিরা আর দুটি শুকনো লঙ্কা দিয়ে হালকা ফ্রাই করে নিতে হবে।
ব্লেন্ডারে বা পাটায় বেটে নিয়ে গুড়া মসলা তৈরি করে নিতে হবে।
একটা বাটিতে টমেটো কুচি করতে হবে আর আদা বাটা নিতে হবে।
অন্য একটা কড়াইয়ে সরিষার তেল দিয়ে পাঁচফোড়ন আর শুকনো মরিচ দিতে হবে ।
এইবার সমস্ত মসলা দিয়ে ভুনতে হবে। ভুনা হলে সবজি গুলো দিতে হবে।
সবজি গুলো হালকা নাড়াচাড়া করে কিছু সময় ঢেকে রাখতে হবে।
এরপর ঢাকনা খুলে এর মধ্যে আদা বাটা, টমেটো কুচি, পরিমাণমত লবণ, হলুদ গুড়া, কাঁচা মরিচ ফালি, জিরা গুড়া , শুকনো মরিচ গুড়া ও তেজপাতা দিয়ে ভালো করে নাড়তে হবে।
প্রয়োজন অনুযায়ী পানি দিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখতে হবে এবং মাঝে মাঝে একটু চামচ দিয়ে নেড়ে দিতে হবে ।
ঢাকনা খুলে দেখতে হবে সবজি সিদ্ধ হয়েছে কিনা। সিদ্ধ হলে ব্লেন্ডার করা গুড়া মসলাটা ছিটিয়ে দিতে হবে। অল্প সময় চুলায় হালকা তাপে রেখে তারপরে নামাতে হবে।
এবার গরম গরম পরিবেশনের পালা।