নামাজ শিক্ষা সম্পর্কে আবু হোরায়রা (রা) হাদিস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন, “হে পৃথিবীর মানুষ, আমাকে যেভাবে নামাজ আদায় করতে দেখছো; তোমরাও সেভাবে সালাত আদায় করো।”
এই হাদিসে বর্ণনা অনুযায়ী মহানবী (সা) সারা পৃথিবীর মানুষ কে বলেছেন তার অনুরূপভাবে নামাজ পড়তে। এখানে নারী-পুরুষ এর জন্য আলাদা নামাজ শিক্ষা দেয়া হয়নি।
নামাজ
আমরা মহানবী (সা) এর নামাজ আদায় করতে দেখিনি। তিনি অনেক আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।
তবে তিনি যাবার আগে পৃথিবীর মানুষকে বলে গেছেন হে মানুষ তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে গেলাম। (১) আল কুরআন ও (২) আল হাদিস।
নিয়ত
নামাজ শুরু করার আগে আমাদেরকে অবশ্যই নিয়ত করতে হবে। বুখারী শরীফের সর্বপ্রথম হাদীসে বর্ণিত আছে, ‘ইন্না মা’আল আ’মালু বিন্নিয়াত” বা প প্রত্যেকটা আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।
সুতরাং আমরা নামাজ আদায়ের পূর্বে কোন ওয়াক্তের নামাজ পড়বো, কি নামাজ পড়বো (ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত না নফল) ও কয় রাকাত নামাজ পড়বো? তা অন্তরে ক্লিয়ার ভাবে থাকতে হবে।
হাত বাধা ও ছানা পড়া
সহিহ নামাজ শিক্ষায় আল্লাহু আকবার বলে, হাতের তালু কিবলামুখী রেখে এবং আঙ্গুলগুলো একসাথে রেখে হাত বাধতে হবে।
হাত বাধার নিয়ম ও মতভেদ; কোনটা উত্তম?
এরপর সানা পড়তে হবে। ছানা- সুবহানাকা আল্লাহুম্মা বিহামদিকা ওয়াতাবারা কাসমুকা ওয় তায়ালা জাদ্দুকা ওয়ালা ইলাহা গয়রুুক।
নামাজ শিক্ষাঃ সূরা পড়া
প্রথমে আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম ও বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম পড়তে হবে।
এবার সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা বা যেকোন সূরার সর্বনিম্ন তিনটি আয়াত পড়তে হবে।
সবসময় সতর্ক থাকতে হবে যেন কিরাতে কোন ভুল না হয়। কেরাত ভুল হলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। কিরাত সবসময় ধীরে ও শুদ্ধভাবে পড়তে হবে।
রুকু
কিরাত শেষ হলে, আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে কোমর হতে মাথা পর্যন্ত মাটির সমতল হবে। আর সম্পূর্ণরূপে পজিশনে না যাওয়া পর্যন্ত রুকুর দোয়া পড়া যাবে না।
এবার রুকুর দোয়া- “সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম” কমপক্ষে তিনবার পড়তে হবে। রুকুর দোয়া সহিহ ও শুদ্ধভাবে পড়তে হবে। তাড়াতাড়ি ও ভুল করে পড়া যাবে না।
রুকুর দোয়া শেষ হলে, “সামিআল্লাহু লিমান হামিদা” বলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পর বলতে হবে- “রাব্বানা লাকাল হামদ”।
সিজদা
সহিহ ভাবে নামাজ পড়তে হলে নামাজ শিক্ষার প্রয়োজন। রুকু শেষ হলে, আল্লাহু আকবার বলে প্রথম সিজদায় যেতে হবে। সম্পূর্ণরূপে সিজদার পজিশনে না যাওয়া পর্যন্ত সিজদার দোয়া পড়া যাবে না।
এবার সিজদার দোয়া- “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” কমপক্ষে তিনবার পড়তে হবে। রুকুর মত সিজদার দোয়া সহিহ ও শুদ্ধভাবে পড়তে হবে; তাড়াতাড়ি ও ভুল করে পড়া যাবে না।
সিজদার দোয়া শেষ হলে, “আল্লাহু আকবার” বলে সোজা হয়ে বসতে হবে। বসার পর দুই বার “রাব্বিগ ফিরলি” পড়তে হয়। এছাড়া আরো দোয়া আছে যেগুলো পড়া যায়।
আবার আল্লাহু আকবার বলে ২য় সিজদায় গিয়ে সিজদার দোয়া- “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” কমপক্ষে তিনবার পড়তে হবে।
রুকুর মত সিজদার দোয়া সহিহ ও শুদ্ধভাবে পড়তে হবে; তাড়াতাড়ি ও ভুল করে পড়া যাবে না।
সিজদার দোয়া শেষ হলে, “আল্লাহু আকবার” বলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।
২য় রাকাত
দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম পড়ে প্রথম রাকাতের মতো সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।
প্রথম রাকাআতের মত রুকু ও সিজদা করতে হবে। কিন্তু দ্বিতীয় রাকাতে শেষে সিজদার পর “আল্লাহু আকবার” বলে বসতে হবে।
আল্লাহু আকবার বলে বসার পর তাশাহুদ বা আত্তাহিয়াতু পড়তে হবে। মনে রাখবেন নামাজ কবুল হওয়ার জন্য শুদ্ধভাবে নামাজ শিক্ষার প্রয়োজন।
নামাজ শিক্ষাঃ দুই রাকাত নামাজের ক্ষেত্রে
দুই রাকাত বিশিষ্ট নামাজের ক্ষেত্রে তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পরে যথাক্রমে দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাসুরা পড়তে হবে।
তাশাহুদ, দরুদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা শেষ হলে ডান দিকে ও বাম দিকে সালাম দিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
চার রাকাত নামাজের ক্ষেত্রে
চার রাকাত নামাজের ক্ষেত্রে ২য় রাকাতে তাশাহুদ আত্তাহিয়াতু শেষ করে আল্লাহু আকবার বলে উঠে দাঁড়াতে হবে।
এরপর পুনরায় প্রথম রাকাতের মতো বিসমিল্লাহ সহকারে সূরা ফাতিহা অন্য একটি সূরা পড়ে রুকু ও সিজদা দিতে হবে।
সিজদা শেষে পুনরায় আল্লাহু আকবার বলে উঠে দাঁড়াতে হবে। এবারও প্রথম ডাকাতের মতো বিসমিল্লাহ সহকারে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।
চতুর্থ রাকাতেও প্রথম রাকাতে মত রুকু ও সিজদা করতে হবে। সিজদা শেষ হলে আল্লাহু আকবার বলে বসতে হবে।
সোজা হয়ে বসার পর তাশাহুদ বা আত্তাহিয়াতু, দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাসুরা পরে ডান দিকে বাম দিকে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
তিন রাকাত নামাজের ক্ষেত্রে
তিন রাকাত নামাজের ক্ষেত্রে ২য় রাকাতে তাশাহুদ আত্তাহিয়াতু শেষ করে আল্লাহু আকবার বলে উঠে দাঁড়াতে হবে।
এরপর পুনরায় প্রথম রাকাতের মতো বিসমিল্লাহ সহকারে সূরা ফাতিহা অন্য একটি সূরা পড়ে রুকু ও সিজদা দিতে হবে। সিজদা শেষ হলে আল্লাহু আকবার বলে বসতে হবে।
সোজা হয়ে বসার পর তাশাহুদ বা আত্তাহিয়াতু, দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাসুরা পরে ডান দিকে বাম দিকে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
নামাজ শেষে আস্তাগফিরুল্লাহ তিনবার ও ও দরুদ শরীফ পড়ে মোনাজাত করতে হবে।
মোনাজাতের আগে দরুদ, সূরা কাওসার, সূরা ফাতিহা ও আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে দোয়া সহজে কবুল হয়।