ঝটপট চিকেন সুপ রেসিপি

সুপের পরিচয় ও উৎপত্তি

সুপ এক জাতীয় তরল পানীয়; যা সাধারণত এই খাবার মাংস বা সবজি সাথে সুপের স্টক, জুস বা  অন্যান্য তরল পদার্থ মিশিয়ে বানানো হয়। উপকরণগুলো পানিতে অনেক সময় ধরে সিদ্ধ করে তা থেকে স্বাদ ও মাংসের জুস বের করে নেয়া হলো গরম গরম সুপের বৈশিষ্ট্য। সুপকে সাধারণত ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে; এগুলো হল- ক্লিয়ার সুপ বা পরিষ্কার সুপ ও ভারী স্যুপ। 

যিশু খ্রিস্ট এর জন্মের প্রায় ৬ হাজার বছর পূর্বে প্রথম স্যুপ তৈরি করা হয়ে ছিল। সুপ শব্দটি উৎপন্ন হয়েছে ফরাসি ভাষা থেকে। ১৮ শতকের দিকে বহন যোগ্য স্যুপ আবিষ্কৃত হয়। আবার ১৯ শতকের দিকে ক্যান করার পদ্ধতি আবিষ্কার হওয়ার পর বাণিজ্যিক সুপ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এছাড়া বর্তমানে নানা ধরনের ক্যান স্যুপ ও শুকনো স্যুপ বাজারে পাওয়া যায়। ১৮৯৭ সালের দিকে ক্যাম্পবেল সুপ কোম্পানীর সাথে ডঃ জন টি ড্রেন্স ঘনীভূত সুপ আবিষ্কার করেছিলেন। বর্তমানে ক্যাম্পবেল কোম্পানি টমেটো, মাশরুম, ক্রিম ও চিকেন নুডলস স্যুপ আমেরিকায় বাজারজাত করে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। 


সুপের প্রকারভেদ

পৃথিবীতে অনেক প্রকারের স্যুপ আছে। ডেজার্ট সুপ, ফলের সুপ, ঠান্ডা সুপ, এশিয়ান সুপ, থাই সুপ, ক্লিয়ার সুপ, চিকেন সুপ এদের মধ্যে অন্যতম। ফলের সুপ কখনও ঠান্ডা আবার কখনও গরম পরিবেশন করা হয়। আবার গরম আবহাওয়ায় ঠান্ডা সুপ ও ঠান্ডা আবহাওয়ায় গরম সুপ বেশি পরিবেশন করা হয়। ফলের সুপ তৈরিতে দুধ, মিষ্টি, মশলা, অ্যালকোহল জাতীয় পদার্থ মিশ্রিত করা হয়। মধ্য এশিয়া ও চীনা দেশগুলোতে গরম ফলের সুপে মাংস মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়ে থাকে। 


সুপের উপকারীতা

পৃথিবীর বিভিন্ন তরল খাবারের মধ্যে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর পানীয় হলো স্যুপ। মানব দেহের পানি শূন্যতা দূর করার পাশাপাশি পুষ্টির যোগান দিতে সুপের বিকল্প নেই। তবে সুপের উপকরণের উপর নির্ভর করে এই পুষ্টিগুণ।

সুপে সাধারণত মুরগির মাংস, সবজি, কর্ণ ফ্লাওয়ার ব্যবহার করা হয়; যা অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উপকরণ। অসুস্থতার সময় এই সুপকে প্রধান খাবার হিসেবে গন্য করা হয়ে থাকে। অসুস্থ্যতার সময় দেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে অত্যন্ত সাহায্য খাবার বা পানীয় হল এই সুপ।

সুপকে এক কথায় বলা হয় স্বাস্থ্যকর পানীয়। শরীরের পানি শূন্যতা দূর করার পাশাপাশি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। আবার সুপ শরীরে প্রয়োজনীয় অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও অন্যান্য পুষ্টির যোগান দেয়। সুপ পৃথিবীর মধ্যে বিভিন্ন পানীয়ের মধ্যে স্বাস্থ্যকর হিসেবে পরিচিত।

 নিম্নে উপকারীতা দেওয়া হলঃ


  1. চটপট হজমের দারুন পানীয়; অসুস্থতার সময় হজম শক্তি কমে যায় কিন্ত সুপ সহজে হজম হয়। 

  2. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে; পুষ্টিকর উপকরণের তৈরি স্যুপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই অসুস্থ্যতার সময়সহ সুস্থ থাকতেো স্যুপ খাওয়া উচিৎ। এটা বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগ, ঠান্ডা এবং জ্বরের জন্য উপকারী পানীয়।

  3. সুপ প্রদাহ বিরোধী হিসেবে কাজ করে; বিভিন্ন অসুস্থতায় বিশেষজ্ঞরা চিকেন স্যুপ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

  4. পানিশুন্যতা পূরণ; অসুস্থতায় মানব দেহে বাড়তি পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তি এ সময় বেশির ভাগ রোগী পানি পান করতে চায় না। এ ক্ষেত্রে সুপ পুষ্টির যোগানের পাশাপাশি মানব দেহের পানিশুন্যতা পূরণেও সহায়তা করে।

সব স্যুপ কিন্তু স্বাস্থ্যকর নয়। “স্যুপ স্বাস্থ্যকর পানীয় ” কথাটা ঠিক; তবে এর উপকরণ উপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্যকর কিনা সেটা বলতে হবে। অথেনটিক স্যুপ বা স্বাস্থ্যকর সুপ বলতে বোঝায় প্রাকৃতিক উপাদান ও মসলা দিয়ে বানানো কম চর্বি, কম লবণ আর মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ তরল পানীয়কে। সুপ তৈরি করতে যত কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার করা হবে, সুপ ততই অস্বাস্থ্যকর হবে। সে কারণে হোটেল বা রেস্তোরার স্যুপ খাওয়ার সময় সতর্ক থাকা উচিৎ। হোটেল বা রেষ্টুরেন্টের সুপে স্বাদ বাড়াতে নানা প্রকার কৃত্তিম ও অস্বাস্থ্যকর উপকরণ ব্যবহার করে। এ জন্য সবচেয়ে ভালো ও স্বাস্থ্যকর উপায় হলো নিজের বাসায় সুপ তৈরি করা।

চিকেন সুপের উপকরণঃ

 চিকেন/মুরগির বুকের মাংস ৪০০ গ্ৰাম

পেয়াজ ২ টি (মাঝারি সাইজ)

স্প্রিং অনিয়ন ৪টি 

আদা একটুকরো (এক ইঞ্চি সাইজের)  

কর্ণফ্লাওয়ার ২ টেঃ চামচ

দুইটি ডিম

গোলমরিচ গুঁড়ো প্রয়োজনমত

বাটার/মাখন ৪ টেঃ চামচ

লবণ


তৈরির ধাপ

১ম ধাপঃ-

প্রথমে চিকেন স্টক বসাতে হবে। চিকেন স্টক বসানোর জন্য মুরগির বুক ভাল করে পরিস্কার করে একটি পাত্রে মুরগির বুক, আদা কুচি, পেয়াজ কুচি, লবন দিয়ে তালকা তাপে প্রায় ২ ঘন্টা সিদ্ধ করতে হবে। যত বেশি সময় সিদ্ধ করবেন তত উপকরণের পুষ্টিগুন সুপ স্টকে মিশে যাবে।


২য় ধাপঃ-

এবার স্টেনার দিয়ে সুপের পানি ছেকে পানি চুলায় দিয়ে হালকা তাপে রাখুন। মুরগির কালো মাংস ফেলে দিয়ে হাড়ছাড়া মাংস কিমা/বেটে নিন। এবার কর্নফ্লাওয়ার ঠান্ডা পানিতে গুলে নিন। সুপের পানি ফুটতে শুরু করলে মাংস ও গুলানো কর্ণফ্লাওয়ার মিশিয়ে দিন। 


৩য় ধাপঃ-

সুপ ঘন হয়ে আসলে গোল মরিচ গুড়া ও লবণ দিয়ে ঝাল ও লবণ ঠিক করে নিন। সব কিছু ঠিক থাকলে ডিমের কুসুম ভাল করে ফেটে নিয়ে সুপের ভিতরে ঢালুন। ডিম আস্ত আস্ত থাকবে না। ডিম সিদ্ধ হয়ে গেলে  সুপের উপরে বাটার ও স্প্রিং অনিয়ন দিয়ে রেখে দিন।


৪র্থ ধাপঃ-

পরিবেশনের সময় মগ দিয়ে চুলার উপর থেকেই কাপে ঢেলে গরম গরম পরিবেশন করুন।

পরিবেশনের সময় মগ দিয়ে চুলার উপর থেকেই কাপে ঢেলে গরম গরম পরিবেশন করুন।

নবীনতর পূর্বতন