টক দইয়ের উপকারীতা
রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা সম্পন্ন সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে খাবার। খাদ্য যেমন রোগকে দূরে রাখতে পারে তেমন করে খাবার খাবারের কারণেই শত রোগ মানুষের শরীরে বাসা বাঁধার সুযোগ পায়। সেজন্য সকল কিছু নিয়মনীতির পাশাপাশি খাবার ব্যাপারেও আমাদের অনেক বেশী সচেতন হতে হবে। পৃথিবীতে অনেক খাদ্য আছে যেগুলোর মাঝে অনেক প্রকার গুন আছে। এমনই একটা খাবার হল টক দই।
টক দইতে প্রচুর আমিষ, ভিটামিন, মিনারেল রয়েছে। টক দইতে অসংখ্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে; যা আমাদের শরিরের জন্য ভীষন উপকারী। টক দইয়ে দুধের চেয়ে বেশী ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম ও পটাশ রয়েছে। রুটিন করে টক দই খাওয়া শুরু করলে সাথে সাথেই একজন ব্যক্তি তার ফল পায় ।
মানব শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্ভর করে পরিপাকতন্ত্রের উপর। আপনারা অনেকেই জানেন যে, ইমিউন সেলের শতকরা সত্তর ভাগই থাকে পরিপাকতন্ত্রের সাথে। পরিপাকতন্ত্র থেকে তৈরি হয় এন্টিবডি ও কোষ; যা শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করে মেরে ফেলে।
খাবারের সাথে পাকস্থলীতে নানা প্রকার জীবাণুও প্রবেশ করে। আর পাকস্থলীর আবরণের কাজ এই ক্ষতিকারক জীবাণুকে শরীরে প্রবেশ করতে না দেয়া। এর পাশাপাশি পাকস্থলীরত রয়েছে অনেক উপকারি ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাক্টেরিয়ার কাজ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করা। এগ্রলোকে বলে প্রো-বায়োটিক।
টক দইয়ের ১৫টি উপকারিতা
টক দইয়ে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম; হাড় ও দাত গঠনে সহায়তা করে এগুলো। বিশেষভাবে মহিলাদের এই দই বেশী প্রয়োজন; কেননা মহিলারাই ক্যালসিয়ামের অভাব এ ভোগেন।
এতে রয়েছে উপকারী ব্যাকটেরিয়া; এগুলো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
এই খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও ঠান্ডা, জ্বর ও সর্দির ঔষধ হিসেবে কাজ করে।
এতে আছে ল্যাকটিক অ্যাসিড; যা কোষ্টকাঠিন্য ও ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে। এটা কোলন ক্যানাসার রোগীর খাদ্য হিসেবে ব্যবহারে উপকার হয়।
যাদের দুধে অরুচি বা বদ হজমের সমস্যা আছে, তারা টক দই খাবেন; কারণ এটার আমিষ দুধের চেয়ে সহজে ও কম সময়ে হজম হয়।
ওজন কমাতে এই খাবার সাহায্য করে। আমিষের জন্য পেট ভরা মনে হয় ও প্রচুর শক্তি পাওয়া যায়।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে এটা দারুন ভুমিকা রাখে। রুটিন মাফিক এক কাপ করে টক দই খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে ও রক্তের অতিরিক্ত কোলেষ্টেরলের মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে।
হার্ট ও ডায়াবেটিস সমস্যায় টক দই অনেক নিয়ন্ত্রনে থাকে।
এটা শরীরে টক্সিন জমতে বাধা দেয়। এর কারণে অন্ত্রনালী পরিস্কার থাকে; যা শরীর সুস্থ্য রাখে এবং বার্ধক্য রোধে সহায়তা করে।
রুটিন মাফিক টক দই খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম, রিবোফ্লাবিন, ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন বি-৫ ও ভিটামিন বি-১২ থাকায় এটি খুব দরকারী একটি খাবার।
নিয়ম মাফিক টক দই খেলে অন্য খাবারের পুষ্টি শরীরকে পর্যাপ্ত সরবরাহ করে ও রক্ত শোধন করতে সহায়তা করে।
ব্রেইনকে টাইরোসাইন সরবরাহের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি দেয় ও ক্লান্তি কমায়|
টক দই শারিরীক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে; গরমের সময় টক দই খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে।
টক দই পেট খারাপের ঔষধ যেমনঃ ডায়রিয়া, আমাশয়, কোষ্ঠকাঠিন্য, ফুড পয়জনিং ও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
টক দইয়ের জনপ্রিয় ও মুখরোচক পদ্ধতি হলো বোরহানি। টক দই এর সাথে বিট লবন, গোল মরিচ গুঁড়া, পুদিনা বাটা ইত্যাদি দিয়ে তৈরী করা হয় এই বোরহানি; খেতে অসাধারন ও স্বাস্থ্যকরও।
ডাক্তার ও পুষ্টিবিদেরা সব সময় টক দই খেতে পরামর্শ করেন। উন্নত দেশগুলোতে খাবার পরে টক দই খাবার অভ্যাস গড়ে তুলেছে।
টক দই রেসিপি
উপকরণ
এক লিটার দুধ
বীজ দই এক চামচ ( যে কোন টক দই; যা বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হবে।)
দইয়ের খুটি বা মাটির ভাঁড় দুইটি
তৈরির ধাপ
১ম ধাপঃ- প্রথমে একটি পাত্রে দুধ ঢেলে অল্প তাপে জ্বালাতে থাকুন। যখন মনে হবে দুধ ৭৫০ গ্রাম হয়েছে তখন চুলা থেকে দুধ নামিয়ে ফেলুন। মনে রাখবেন দুধ বেশি তাপে গরম করলে নিচে লেগে যাবে ও পোড়া পোড়া গন্ধ হবে। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে দই বসতে চায় না।
২য় ধাপঃ- দুধ আস্তে আস্তে নাড়তে থাকুন যতক্ষণ প্রর্যন্ত কুসুম গরম না হয়। দুধ যখন কুসুম গরম হবে বা দুধের ভিতরে আঙ্গুল দিলে যখন সহ্য হবে তখন দুধ মাটির খুটিতে ছেকে ঢেলে নিন। সব সময় মাটির খুটি ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। কেননা দই থেকে অতিরিক্ত পানি বের হলে এটা শুষে নিয়ে দই খুব ভালো ভাবে জমাবে। মাটির খুটি না থাকলে আপনারা কাচের, প্লাস্টিকের বা স্টিলের বাটিতে ও দই জমাতে পারেন।
৩য় ধাপঃ- এখন মাটির খুটিতে দুধের ভিতরে সামান্য পরিমাণ বীজ দই (পুরাতন ভাল টক দই) দিয়ে দিন। এবার ভাল করে মিশিয়ে নিন। দই বসানোর জন্য অবশ্যই পুরনো দই বা বীজ দই ব্যবহার করতে হবে। নিজের বাসায় না থাকলেও প্রতিবেশীর বাসা এক চা চামচ টক দই ম্যানেজ করুন।
৪র্থ ধাপঃ- এবার দইয়ের খুটি কক্ষ তাপমাত্রায় রেখে দিন। যেখানেই রাখুন তা অবশ্যই উষ্ণ জায়গায় হতে হবে; ঠাণ্ডা স্থানে রাখা যাবে না।
৫ম ধাপঃ- এভাবে ৬-৮ ঘন্টা রেখে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে দই। শীতকালে আরেকটু বেশি সময় রাখতে পারেন। গরমকালে আরো কম সময় লাগতে পারে। তবে এর ওপর নজর রাখা জরুরী। কারণ গরমকালে বেশি সময় বাইরে রেখে দিলে দই টকে নষ্ট হয়ে যাবে। যখন দেখবেন দই জমে গেছে, তখন একে ফ্রিজে রাখতে পারেন, রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন অথবা খেয়ে নিতে পারেন তখনই।