মচমচে ও মজাদার পিয়াজু রেসিপি

পিয়াজু নি‌য়ে ধারণা

পিয়াজু ও পা‌কোড়ার মত একটি হালকা নাস্তা জাতীয় মুখ‌রোচক খাবার। এই খাবার পাড়ার মো‌ড়ের হো‌টে‌লে ভুনা ছোলার সা‌থে ব‌্যাপক আসর জমায়।

পিয়াজু বাংলাদেশের এক‌টি অত‌্যন্ত জনপ্রিয় ভাজা ঝাল জাতীয় মুখ‌রোচক খাবার। ডা‌লের পিয়াজু সাধারণত টি‌ফিন বা বিকেলের নাস্তায় বে‌শি পরিবেশিত হয়। বিশেষ করে রমজান মা‌সে রোজার সময় ইফতারের সময় এর প্রচলন বে‌শি দেখা যায়। পিয়াজু সাধারণত মসুর ডাল অথবা খেসারির ডাল  আধা বাটার সাথে পিয়াজ কুচি, মরিচ বাটা, লবণ ও বিভিন্ন মশলা মিশিয়ে ছোট ছোট চ্যাপ্টা বা গোলাকা‌রের ক‌রে তৈরি করা হ‌য়ে থা‌কে, এরপর ডোবা তেলে ভেজে রান্না করা হয়। এ‌তে প্রচুর প‌রিমা‌ণে পিয়াজ ব‌্যবহার করা হয় বলে এর নাম দেয়া হয় "পিয়াজু"। কোথাও কোথাও এই খাবার কে বড়া হিসেবেও বলা হয়। এটি একটি হালকা নাস্তার ঝাল জাতীয় মুখ‌রোচক খাবার। এটির বৈ‌শিষ্ঠ‌্য হ‌লো পু‌ষ্টিকর, মচমচে এবং সুস্বাদু।


রমজ‌া‌নে পিয়াজু

আস‌ছে রমজান, বি‌লি‌য়ে দি‌বে রহমত, বরকত ও নাজাত। সবাইকে জানাই অ‌গ্রিম রমজান মোবারক ও রমজা‌নের শুভেচ্ছা। রমজান মাসে সারা দিন রোজা পালন ক‌রে ইফতারের টেবিলে খেজুর, সরবত, ছোলা, মু‌ড়ি, বু‌ন্দিয়া ও পিয়াজু ছাড়া ইফতার টেবিল প্রায় খা‌লি খা‌লিই লা‌গে অসম্পূর্নতা  সম্পূর্ণ করতে আজ মচম‌চে, সুস্বাদু পিয়াজু রেসিপি নিয়ে হাজির হলাম। অনেকেই হয়ত ভাবতে ব‌সে‌ছেন এটা তো খুব কম দা‌মেই পাড়ার মোড়ের ফুটপা‌তে পাওয়া যায় তাহলে কেনই বা বাসায় ঝামেলা বাড়াব! আ‌মি তা‌দের বল‌ছি, আপনারা সাড়া দিন রোজা রে‌খে ফুট পা‌তের ধুলা ময়লায় ও অব‌হেলায় রান্না করা খাবার কেন খা‌বেন। একটু ভাবুন আপ‌নি এত কষ্ট ক‌রে রোজা পালন কর‌ছেন, নামাজ আদায় কর‌ছেন, ধৈয‌্য ধ‌রে আ‌ছেন রমজা‌নের রহমত, নাজাত ও বরক‌তের আসায়। কিন্তু ভাবুন আপনার একটু অব‌হেলায় নি‌জে‌কে ও প‌রিবার কে ফুট পা‌তের খাবার ‌দি‌য়ে তা‌দের অসুস্থতা ব‌য়ে আন‌তে কি পা‌রে না। অসুস্থতায় কি রমজান পার কর‌তে পার‌বেন। দেখুন আ‌মি সহ‌জ নিয়‌মে আপনা‌দের কা‌ছে পিয়াজুর রে‌সি‌পি নি‌য়ে এ‌সে‌ছি। স্বাস্থ‌্য সম্মত পিয়াজু রে‌সি‌পি দেখুন নি‌চেঃ


পিয়াজু প‌রি‌বেশ‌নের টিপ্স

বন্ধু বা পা‌রিবা‌রিক আড্ডায় মচম‌চে পিয়াজুর সা‌থে ভুনা ছোলা ও এক কাপ চা দিন, ‌দেখুন জ‌মে খিড় হ‌য়ে যা‌বে। 

শীতকা‌লে হালকা হালকা রো‌দের বিকালের নাস্তা হিসেবে চায়ের সা‌থে গরম গরম পিয়াজু, বল‌তেই ম‌ু‌খে জল চ‌লে আ‌সে।

ইসলাম ধ‌র্মের মহান মাস রমজা‌নে ইফতারের জন্য কম সম‌য়ে রান্না  করে ফেল‌তে পা‌রেন এই রে‌সি‌পি।

বাড়িতে অতিথি আগমণ, কম সম‌য়ে রান্না কর‌তে পা‌রেন এই মচম‌চে, সুস্বাদু, মুখ‌রোচক ও পু‌ষ্টিকর খাবার পিয়াজু।  

ভে‌জি‌টে‌রিয়ানদের অন‌্যতম হালকা নাস্তা হি‌সে‌বে গরম গরম ও মচমচে পিয়াজু প‌রি‌বেশন কর‌তে পা‌রেন।


পিয়াজুর জন‌্য প্রয়োজনীয় উপকরণঃ

মসুর এবং খেসারি ডাল -১.৫ কাপ

পেয়াজ  -২ টেঃ চামচ ( কু‌চি কু‌চি ক‌রে কাট‌া)

কাঁচা মরিচ – ১ টেঃ চামচ( কু‌চি কু‌চি ক‌রে কাট‌া)

লবন – স্বাদ মত

হলুদ গুড়া – ১/২ চামচ

বেসন – ২ টেঃ চামচ

চালের গুড়া – ২ টেঃ চামচ

আদা বাটা ও রসুন বাটা – ১/২ চামচ

ধনিয়া পাতা – ১ টেঃ চামচ ( কু‌চি কু‌চি ক‌রে কাট‌া)

সয়া‌বিন তেল – পরিমাণ মতো ( ভাজার জন্য)


পিয়াজু তৈরি ধ‌াপঃ

প্রথমে ডালগু‌লো কমপ‌ক্ষে ৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন।

ডালগুলো ভালো করে ধুয়ে একটি পা‌ত্রে ঢে‌লে নি‌ন।

এবার অ‌র্ধেক প‌রিমা‌নে ডাল মি‌হি বাটুন বা ব্লেন্ডার করুন, বা‌কি অ‌র্ধেক আধা মি‌হি বাটুন বা ব্লেন্ডার করুন।

এবার তেল ছাড়া সব উপকরণঃ যেমন – বাট‌া ডাল,  পেয়াজ কুচি, আদা বাটা, রসুন বাটা, কাঁচা মরিচ কুচি, ধনিয়া পাতা কুচি, হলুদ গুড়া, বেসন, চালের গুড়া ও স্বাদ মত লবন দিন।

সকল উপকরন হাত দিয়ে ভাল ক‌রে মে‌খে মিশিয়ে নিন। যদি মনে হয় উপকরন গুলো শুকনো হ‌য়ে‌ছে তবে অল্প প‌রিমা‌ণে পানি দিয়ে শক্ত ডো তৈরী করুন।

তারপর চুলায় একটি পা‌ত্রে পর্যাপ্ত পরিমানে তেল দিয়ে হালকা গরম করে নিতে হবে। 

তেল গরম হলে একটু একটু করে পেয়াজুর মত সাইজ করে তেলে দি‌য়ে দিন। 

পিয়াজু ক‌খনোই বেশি গরম তে‌লে ভাজ‌বেন না, বে‌শি হি‌টে ভাজ‌লে উপ‌রে পু‌ড়ে যা‌বে কিন্ত ভিত‌রে কাচা কাচা ভাব থে‌কে য‌া‌বে। তাছাড়া পিয়াজু মচম‌চে হ‌বে না।

পিয়াজু ব্রাউন কালার করে ভেজে নিতে হবে।

তারপর ঝু‌ড়ি‌তে টিস‌্যু বি‌ছি‌য়ে পিয়াজু তেল থে‌কে তু‌লে রাখুন। এতে পিয়াজু তে লে‌গে থাকা এক্সট্রা তেল শুকি‌য়ে দে‌বে ও পিয়াজু মচম‌চে কর‌তে সাহায‌্য কর‌বে।


পিয়াজু নি‌য়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর ( টিপ্স)

পিয়াজুর ব্যাপারে অনেক অনেক রিকুয়েস্ট ও প্রশ্ন শোনা যায়। বিশেষ যারা প্রবাসী, তারা অনেকেই ডাল নিয়ে কনফিউসড থা‌কে। অ‌নে‌কে জান‌তে চায় খেসারির ডাল বিদেশে কি পাওয়া যায়। য‌দি পাওয়া যায় ত‌বে তার ইংলিশ নাম কি? য‌দি এই ডাল না পাওয়া যায় ত‌বে অন্য ডাল ব্যবহার করা যা‌বে কিনা?

আ‌মি বলব খেসারির ডালের ইংলিশ  নাম Grass pea. যুক্তরা‌স্ট্রে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশি কিছু গ্রসারিতে পাওয়া যে‌তে পা‌রে‌। 

খেসারির ডাল ব‌্যবহার কর‌লে পিয়াজু অনেক মচমচে হয়। ত‌বে এই ডাল  পাওয়া না গেলে কি ব্যবহার করবো? 

উত্ত‌রে আ‌মি বল‌বো যেকোন চানা ডাল বা মটর জাতীয় ডাল ব্যবহার করা যে‌তে পা‌রে। মটর ডাল ব্যবহার করুন মসুর ডা‌লের সাথে, মচমচে পিয়াজু পাবেন অ‌নেক সময়ের জন‌্য। পিয়াজুর টিপ্সে আ‌ছে;


১. শুধু মসুর ডালে পিয়াজু বেশিক্ষন মচমচে থাকে না। তাই মশুর ডা‌লের সাথে চানা ডাল, মটর ডাল বা অড়হড় ডাল মি‌শি‌য়ে রান্না করেই দেখুন খেয়ে যেমন মজা পাবেন, মচমচে থাকবেও বে‌শি সময়।

২. পিয়াজুর ডাল ১ ঘন্টার বে‌শি সময় ভিজিয়ে রাখুন। মসুর ডাল বাদে অন্য ডাল আ‌রো বেশি সময় ভিজিয়ে রাখ‌তে হয়।

৩. পিয়াজুর জন‌্য ডাল মিহি ক‌রে বাটবেন না. অর্ধেক মিহি করে বাটুন আর বাকি অর্ধেক আধা ভাঙ্গা করে বাটুন। যারা ব্লেন্ডা‌রে করবেন তারা চেষ্টা করবেন অর্ধেক প‌রিমাণ  মিহি করে ব্লেন্ড করতে আর বাকি অ‌র্ধেকটা আধা ভাংগা রাখতে। ব্লেন্ড করার সময় পানি ব্যবহার কম না করাই ভাল।

৪. পিয়াজু তে অল্প আলু মিহি কুচি করে দি‌তে পা‌রেন, এতে আলুর ভিতর নরম ও বাইরে ক্রিস্প‌ি বা মচম‌চে থাকে।

৫. অনেকেই পিয়াজ কাটার ভ‌য়ে পিয়াজু তে পিয়াজ দিতেই চান না।  পিয়াজু তে পিয়াজ না থাক‌লে পিয়াজু হয় কিভাবে? পিয়াজুতে পিয়াজ পাতলা করে স্লাইস ক‌রে কে‌টে দিন। মোটা হলে কিন্তু ডালের সাথে মিশবে না ও পিয়াজ পুড়ে যাবে।

৬. পিয়াজু তে কখনোই হলদের গুড়া বে‌শি মাত্রায় ব্যবহার করবেন না। বে‌শি হ‌লে গন্ধ লাগে। আমার ম‌তে না দেওয়াই ভাল।

৭. অল্প প‌রিমা‌ণে চালের গুড়া ব্যবহার করুন। খুব বেশি ব্যবহার কর‌বেন না, বেশি ব‌্যবহার করলে খুব টাইট হয়ে যাবে।

৮. ভাজার সময় পিয়াজুর এক পাশ লাল না হতেই  উল্টি‌য়ে দি‌বেন না।

৯. পাতলা পাতলা করে চ্যাপ্টা করে পিয়াজুর আকারে দিন, এতে মচমচেও হ‌বে আবার খেতেও মজা হ‌বে। 

১০. পিয়াজু ভাজার পর এক‌টি ঝু‌ড়ি‌তে টিস‌্যু বি‌ছি‌য়ে পিয়াজু রাখুন। এতে পিয়াজুতে লে‌গে থাকা তেল শুকি‌য়ে দে‌বে ও পিয়াজু মচম‌চে কর‌তে সাহায‌্য কর‌বে।

নবীনতর পূর্বতন