হয়ত এটা অনেক কঠিন কাজ। কিন্ত আমি মনে করি আপনারা পাশে থাকলে আমাদের পথটা অনেক সোজা হয়ে যাবে। আমি জানি আমাদের এই সাইটের যারা রেসিপি প্রিয় পাঠক ও পাঠিকা ভাই, বোন এবং বন্ধু আছেন, তারা আমাদের থেকে দিনে একটা করে হলেও রেসিপি আশা করেন। এর সাথে প্রায় প্রতিদিন আমাদের সাইট ভিজিট করে একবার হলেও। তাদের জানাই হাজারও ধন্যবাদ। তাদের অনুপ্রেরণায় আজও আমি আমার স্বপ্ন পুরণ করার পথে চলি।
শাহী জর্দা
জর্দা ইংরেজি ইংরেজি শব্দ। ইংরেজিতে Zarda বলে। এর অঞ্চল ভেদে নানা প্রকার নাম রয়েছে। যেমনঃ জরদা, যরদা, জর্দ্দা, শাহী জর্দা। এটা এক ধরনের মিষ্টি ভাত জাতীয় খাবার যা ডেজার্ড কোর্সে পরিবেশন করা হয়।। এই জর্দা সাধারণত বাংলাদেশ, ভারত কিছু রাজ্য ও পাকিস্তানে বেশি পরিবেশন করা হয়। বিয়ে, পার্টি, ছোট খাট অনুষ্ঠানে বা অন্যান্য উৎসবমুখর অনুষ্ঠানে মূল খাবারের পর মিষ্টি জাতীয় খাবার হিসেবে জর্দা পরিবেশন করে থাকে। জর্দার প্রধান উপকরণ চাল, ঘি, চিনি, জাফরান অথবা খাবার রং। অনেক সময় গুটি মিষ্টি ও মোরব্বা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পরিবেশনের সময় ডেকোরেশন হিসেবে কাঠ বাদাম, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম কুচি দেয়া হয়। আবার কেউ কেউ কিচমিচ ও খেজুর দিয়ে থাকে।
তামাকজাত দ্রব্য জর্দার সাথে নামের সাথে মিল থাকলেও নিকোটিন জাতীয় কিছুই ব্যবহার করা হয় না। আসলে জর্দা শব্দটি উৎপন্ন হয়েছে উর্দু এবং ফার্সি শব্দ ’জরদ’ থেকে। জরদ অর্থ হলুদ। জর্দায় বিশেষ করে হলুদ রং ব্যবহার করা হয় বলে এমন নামকরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
জর্দ্দা বাসায় বেশি কেউও রান্না করতে চায় না। বিয়ে বাড়ীতে, অনুষ্ঠানে কিংবা বিশেষ দাওয়াতেই জর্দ্দা রান্না করা হয়। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার হতে এই ডেজার্ট হারিয়ে যাবার দুটো কারন হলঃ রান্নার জন্য মশলার দাম বেশী ও ঘি এবং চিনি ব্যবহার করা হয় বলে শারিরীক সমস্যা হবে বলে না খেয়ে এড়িয়ে যান।
উপকরণঃ
– চাউল (পোলাওয়ের চাল, চাল চিনি গুড়া বা যে কোন সুগন্ধি চাল নিতে হবে, বাসমতি বা দেশমতি হলেও চলবে)
– খাঁটি ঘি (সমস্যা হলে বাটার বা তেল ব্যবহার করতে পারেন)
– জাফরান (জাফরানের দাম অনেক তাই জর্দার রং ব্যবহার করা যায়। এই রং খাবারের জন্য তৈরী করা তাই ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নাই)
– কাঠ বাদাম ও পেস্তা বাদাম কুঁচি (ড্রেসিং করার জন্য, না দিলেও হয়)
– কিচমিচ (স্বাদ বাড়াতে দিতে হবে। দাম প্রতি কেজি ৫০০ টাকার কাছাকাছি)
– দারচিনি (দুই থেকে তিন টুকড়া)
– এলাচি (পাচ বা ছয়টা)
– মোরব্বা (আপনি চাইলে মোরব্বা, শুকনা খেজুর বা গুটি মিষ্টি জাতীয় কিছু নিতে পারেন। আমার বাসার তৈরী মোরব্বা নিয়েছি।)
– চিনি (চিনি কম বেশি আপনার খাবার রুচির উপর নির্ভর করে দিন)
– লবন (পরিমাণমতো)
প্রণালীঃ
ধাপ ১ – সমস্ত উপকরণ অাশেপাশে রাখুন। সব কিছু হাতের থাকলে রান্নার সময় ঝামেলা হবে না। মোরব্বা, খেজুর, কিছমিছ, ইত্যাদি কুচি কুচি করে কেটে রাখুন।
ধাপ ২ – চাল ভাল করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখুন। পানিতে বেশি সময় রাখলে জর্দা বেশি আঠালো হবে। ঝরঝরে হবে না।
ধাপ ৩ – এবার একটি পাত্রে পানি গরম করুন। পানি একটু বেশি দেবেন। তাহলে ভাতের মাড় ভাল ভাবে ঝরবে। পানিতে এলাচ, দারচিনি, জর্দার রং দিয়ে দিন। ধাপ ৪ – পানি বয়েল হলে চাল দিয়ে দিয়ে হাফ সিদ্ধ করে ভাত রান্না করুন। রান্না করা ভাত ঝুড়িতে স্টেনার করে মাড় ঝরান।
ধাপ ৫ – ভাতের উপর গরম পানি থাকলে ঢেলে দিন। বেশি পানি দিয়ে ভাত রান্না করলে না দিলেও চলবে। অল্প পানিতে ভাত রান্না করলে ভাত আঠালো হয় তাই গরম পানি দিলে ভাত ঝরঝরে হয়।
ধাপ ৬– এবার পাত্রে ঘি/ বাটার/ তেল গরম করুন।
ধাপ ৭– তেল বা ঘি গরম হলে আধা সিদ্ধ করা ভাতের তিন ভাগের একভাগ দিয়ে চিনি, জাফরান পানি, মোরব্বা, খেজুর. গুটি মিস্টি ও অন্যান্য উপকরণ (সমস্ত উপকরণ অর্ধেক দিতে হবে আপনার কাছে সমস্ত উপকরণ না থাকলে যা আছে তাই দিন। আমি ব্যবহার যোগ্য অনেক উপকরণ উল্লেখ করেছি। কিন্ত আমি রান্নার সময় শুধু চিনি, মোরব্বা ও মিস্টি কেটে ছোট ছোট টুকরা করে দিয়েছি।)
ধাপ ৮–পুরনায় ভাতের তিন ভাগের একভাগ দিয়ে বাকি অর্ধেক মিস্টি জাতীয় উপকরণ দিন।
ধাপ ৯–ভাতের বাকি অংশ দিয়ে যদি ধি ব্যবহার করেন তবে উপরে ঘি দিয়ে পাত্রের ঢাকনা দিয়ে দমে রাখুন। ঘি ব্যবহার বাধ্যতামুলক নয়, এটা ফ্লেভারের জন্য দেয়া হয়।
ধাপ ১০– ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পাত্রের ঢাকনা খুলে নারাচারা দিয়ে সমস্ত উপকরণ মিশিয়ে দিন।
ধাপ ১১– এবার পরিবেশনের পাত্রে জর্দা তুলে ফেলুন। এবার ঠান্ডা হলে কাঠ বাদাম, পেস্তা বাদাম কুচি উপড়ে ছিটিয়ে দিয়ে পরিবেশন করুন।
নোটঃ জর্দা অনেকে অনেক ভাবে তৈরী করে। আমিও দুই ভাবে রান্না করি। তবে এই পদ্ধতি আমার কাছে সহজ ও বেশ টেস্টি লাগে। যদি আপনারা বলেন তো আমি দ্বিতীয় নিয়মটা সময় করে শেখাবো। ২য় নিয়ম শিখতে চাইলে কমেন্টস করে জানান।