'বাঙালির খাদ্যকোষ' রচয়িতা মিলন দত্তের ভাষায় লুচি হল বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় একটি নোনতা জাতীয় খাবার। ফুলকো লুচিকে নুচি বলেও ডাকা হয়।
লুচির উৎপত্তিস্থল খুজতে গেলে পাওয়া যায় এটি বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উড়িশ্যা ও আসাম প্রথমের দিকে রান্না করা হত।
লুচি শব্দের উৎপত্তিস্থল
প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থে লুচি কিংবা লুচিকা অথবা নুচি বা অন্য কোন কাছাকাছি শব্দ পাওয়া যায়নি। । প্রাকৃতেও লুচি শব্দটি নেই আর থাকলেও তা সবার অগোচরেই রয়ে গেছে। আবার লুচি বা নুচি কিংবা এ জাতীয় কোন শব্দ বাংলার খাটি শব্দও নয়।
তবে কারো কারো মতে লুচি সম্ভবত হিন্দি ভাষা থেকে এসেছে। হিন্দিতে পিচ্ছিল জাতীয় পদার্থ বুঝাতে 'লুচ' বা 'লুচলুচিয়া' শব্দ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ঘি লুচিকে এমন নামকরণ করা হয়েছে।
অন্য কিছু মত অনুসারে লুচি শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত 'লোচক' থেকে। লোচক শব্দের অর্থ চোখের মণি। লুচিকে দেখতে যেহুতু চোখের মণির মত গোল, সেহুতু এর নাম লুচি রাখা হয়।
স্বাস্থ্য সচতেনতা
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স) লুচিতে শক্তি পাওয়া যায় ২৭৮ ক্যালোরি।
শর্করা পাওয়া যায় ৪৫,২৩ গ্রাম।
চিনি থাকে ০,২১ গ্রাম
খাদ্যের ফাইবার ফাইবার মজুদ থাকে ৪,৬ গ্রাম
স্নেহ পদার্থ ৮,১৬ গ্রাম
সুসিক্ত স্নেহ পদার্থ পাওয়া যায় ১,২৩১ গ্রাম
প্রোটিন থাকে ৭,৩ গ্রাম। এছাড়াও আরো অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ তো আছেই।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি
১০ গ্রাম ময়দা দিয়ে রান্না করা একটি মাঝারি মাপের লুচিতে থাকে ১২৫ ক্যালোরি। বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসকদের মতে প্রতি সপ্তাহে একদিন লুচি খেলে কোন অসুবিধা নেই। তবে প্রতিদিন লুচি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ব্যাপক ক্ষতিকারক এবং প্রাতঃরাশে লুচি খাওয়া একদমই অনুচিত। কারণ ময়দা দিয়ে রান্না হওয়ায় লুচিতে প্রচুর মাত্রায় ফ্যাট থাকে। উপরন্তু ভাজার সময় লুচি যথেষ্ট তেল শোষণ করে নেয়।
এছাড়া প্রতিনিয়ত লুচি খেলে বাহ্যিক ত্বকের অনেক ক্ষতি হতে পারে। মুখে ব্রণ হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো লুচি ভাজার পর সেই তেল দিয়ে অন্য খাবার রান্না করলে তা দ্বারা ক্যান্সার, অ্যালঝাইমার কিংবা হার্টের অসুখ হতে পারে।
হিন্দুদের উৎসবে ফুলকো লুচি
বাঙালির হিন্দু পরিবারে বিভিন্ন উপলক্ষে লুচি খাওয়া হয়। দুর্গাপুজাসহ প্রায় সকল পুজায় দেবতাদের ভোগ হিসেবে লুচি নিবেদন করা হয়। এরপরে তা প্রসাদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দুর্গাপুজায় লুচির সাথে লাবড়া সবজি, আলুর দম খুবই জনপ্রিয় খাবার। বাঙালি হিন্দু পরিবারে অধিকাংশ ধর্মীয় উৎসবে যেখানেই ভাত খাওয়ার উপর নিষেধ থাকে, সেখানেই প্রায় সময়ই বাঙালি হিন্দুরা ভাতের পরিবর্তে লুচি খেয়ে থাকেন। জামাই ষষ্ঠীতে শ্বশুড়বাড়িতে জামাইদের লুচি দিয়ে আপ্যায়ন করে হয়। ধর্মীয় ছাড়াও নানা উপলক্ষে বাঙালি হিন্দুরা লুচি খেয়ে থাকেন। একসময়ে বিবাহ উপলক্ষে পাকা দেখার দিন পাত্রপক্ষকে লুচির সাথে আলুর দম দিয়ে আপ্যায়ন করাই ছিল রীতি। বিয়েবাড়ির ভোজের ক্রমণীতে লুচির সঙ্গে হালকা নাস্তা ছিল বেগুন ভাজি, ছোলার ডাল অথবা বাদাম দিয়ে রান্না করা শাকবির্তমানে লুচির সাথে চলে কাশ্মীরি আলুর দম।
লুচির সাথে পরিবেশন করার মত খাবার
লুচির সাথে কষা মাংস
লুচি ও আলু চচ্চড়ি
লুচির সাথে ছোলার ডাল
লুচি, আলুর দম, ছোলার ডাল ও সন্দেশ
লুচি ও চিনি
লুচি রান্নার জন্য উপকরণ ৮ জন
ময়দা ১ কেজি
তেল ৫০০ গ্রাম
বেকিং পাউডার ১ চা চামচ
লবন পরিমাণমত
পানি পরিমাণমত
প্রস্তুত প্রণালী
পরিস্কার একটা পাত্রে ময়দা চেলে নিতে হবে।
ময়দা চেলে নিয়ে তার মধ্যে তেল ও বেকিং পাউডার দিয়ে ময়ান করে নিতে হবে।
পানিতে পরিমানমত লবণ গুলে রাখতে হবে।
লবণ মেশানো পানি দিয়ে ময়দা মেখে খামির তৈরী করতে হবে।
দশ/পনের মিনিট সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
এরপর ছোট ছোট পেরা বানাতে হবে।
পূনরায় ভিজা কাপড় দিয়ে ঢেকে ১০/১৫ মিনিট রাখতে হবে।
এরপরে বেলনা দিয়ে গোল করে ছোট রুটি আকারে বেলে ডুবো তেলে ভাজতে হবে।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভালো ভাবে ফুলে উঠলে হালকা ব্রাউন থাকতেই নামিয়ে নিতে হবে।
গরম গরম উপরে উল্লেখিত যে কোন খাবারের সাথে পরিবেশন করতে হবে।