ঝটপট সিদ্ধ আটার রুটি রেসিপি

প্রাচীন কালেও বিভিন্ন ধরনের রুটি ছিল বলে ঐতিহাসিকরা ধারণা করে। মানব সমাজ গঠনে মূল কেন্দ্র‌বিন্দু ছিল রুটি। আ‌দি সমাজে উর্বর ভূমিতে গম ছিল, হ‌রেক প্রকার পোষা প্রাণী ছিল, আর সে সময় কৃষিকাজ ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তর ও পশ্চিমের ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকার পাশাপা‌শি পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত। যার ফ‌লে মানুষ যাযাবর জীবনের ইতি টে‌নে শহর ও নগর গঠনের দিকে পরিচালিত হয়। এ ক্ষে‌ত্রে তারা  অধিক বাস্তব বুদ্ধি সম্পন্ন সামাজিক সংগঠনের জন্ম দি‌তে সক্ষম হয়। তৎকালীন সময় আমেরিকায় ভুট্টা এবং এশিয়ায় ধানের চাষাবাদ একই সাথে চালু হ‌য়ে‌ছিল।

এক সময় রুটি ছিল গরীবের খাবার আর বড় লোকেরা খেত ভাত। কিন্তু বর্তমান সময়ে রুটি হলো বড় লোকের প্রধান রুচিশীল খাবার। আমি বলছি না এটা গরীব বা মধ্যবত্ত পরিবার খায় না; খায় তবে আগের মত খায় না। এখন রুটি হলো একটি অনুষ্ঠান ভিত্তিক খাবার।

বাড়িতে আমরা সকাল বেলার নাস্তায় সাধারণত রুটি, পরোটা, মোগলাই পরোটাই বেশির ভাগ সময় খেয়ে থাকি। এটা আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে যে, রুটি, পরোটা কিংবা মোগলাই ছাড়া সকালের নাস্তা ভাবাই যায় না। তবে সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো রুটি গোল করে বেলা। আমি মনে করি, সকল কাজের জন্য অভিজ্ঞতা দরকার, তেমনি রুটি গোল করে বেলাও একটা আর্ট; যার জন্য আপনার অভিজ্ঞতা দরকার। আপনি আজ রুটি বেলছেন কিন্ত গোল হচ্ছে না, বাদ দিবেন না; কাল বেলালেই দেখুন অনেকটা গোল হয়েছে। এভাবে দৈনিক অভ্যাস আপনাকে রুটি তৈরীর মাষ্টার করে দেবে।

কেউ কেউ বলে রুটি বানানোর সময় রুটি ফুলে কিন্ত একটু পরেই তা আবার পুরোপুরি চুপসে যায়। আজ আমি শেয়ার করব রুটির ডো/খামির থেকে রুটি গোল করে বেলা, রুটি নরম রাখার পূর্ণঙ্গ কৌশল। এরপরে যে কোন সময় রুটি বানাতে যাবার আগে একবার আমার টিপসগুলো দেখে নিন। তবে শরীর সুস্থ্য রাখার কথা মাথায় রেখে আটার রুটি খাওয়ার অভ্যাস করুন। ময়দার রুটি সর্বদা এরিয়ে চলার চেষ্টা করুন।


রুটির খামির/ডো তৈরি করার টিপ্‌সঃ


সর্বদা ভুষিযুক্ত আটার রুটি খাবার চেষ্টা করুন। কেননা এতে আছে বেশি পরিমাণে ফাইবার। 

প্রথমে যতগুলো রুটি বানাবেন তার পরিমাণ করে আটা নিন। প্রয়োজনমতো লবণ ও একটু সয়াবিন তেল দিন (প্রতি ১০ টি রুটির জন্য ০১ চা চামচ দিলেই হবে)। এবার হালকা গরম করা পানি দিয়ে মিডিয়াম শক্ত করে ডো/খামির বানান (খামির খুব শক্ত বা বেশি নরম করবেন না। মাঝারি শক্ত করে ডো তৈরি করুন। হাত দিয়ে মথে নিন; যখন হাতে খামির লাগবেনা তখন বুঝবেন খামির মাখা ভাল হয়েছে)। হালকা গরম পানি দিয়ে রুটির খামির করলে রুটি নরম হয় ও হজমেও সাহায্য করে। এই রুটি অনেক সময় প্রর্যন্ত নরম থাকে এবং রুটির স্বাদও আলাদা হয়। 


রুটি বেলার টিপ্‌সঃ


খামির করার পর ১৫ মিনিটের বেশি ঢেকে দিয়ে রাখুন। তবে ৩০ মিনিটের বেশি সময় রাখলে খামির নরম হয়ে বেলতে সমস্যা হবে। তাই ১৫ মিনিটের কম বা ৩০ মিনিটের বেশি সময় ঢেকে রাখবেন না। এবার যতগুলো রুটি বানাবেন ততগুলো টুকরো করে খামির ভাগ করে ফেলুন। মনে রাখবেন পেরা/খামিরের টুকরোগুলো বড় হবে না। টুকরো গুলো বড় হলে রুটি মোটা হবে, ফুলবে কম আর খেতে স্বাদ পাবেন না। রুটি পাতলা হলে ভালো করে ফুলবে।

রুটি ভাজার টিপ্‌সঃ

রুটি ভাজার জন্য তাওয়া আগে থেকেই চুলায় বসিয়ে গরম করে নিন। এরপর উভয় পাশ ভালো করে সেঁকে নিন। এভাবে রুটি ভাজলে দেখবেন জালি ব্যবহার না করেও রুটি ফুলবে। রুটি ভাজার পর যে পাত্রে রাখবেন তার মুখ বন্ধ রাখলে ২-৩ ঘন্টা রুটি শক্ত হবে না।


রুটি শক্ত হয়ে যাবার কারণঃ

আটা মেখে খামির করার সময় ১৫%-২০% পানি ব্যবহার করি। আটাতে থাকা কার্বোহাইড্রেট, অ্যালবুমিন, ডায়েটারি ফাইবার এবং স্টার্চ রুটি সেঁকার সময় পানির সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়ার শুরু হয়। বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন হয় ডেক্সট্রিন নামক এক প্রকার আঠা; যা বাতাশেস স্পর্শে এসে রুটিকে তারাতারি শক্ত করে ফেলে। ডেক্সট্রিন আঠা যতক্ষণ নরম থাকবে ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত রুটি নরম থাকবে। এই আঠা শুকিয়ে গেলে রুটি শক্ত হয়ে যায়। তাই রুটি ঢেকে রাখলে এই আঠা ধীর্ঘ সময় নরম থাকে এবং রুটি নরম রাখে।


রুটির কিছু টিপ্‌সঃ


রুটি কখনও একবারের বেশি ২য় বার গরম করবেন না। গরম করলে আরো  শক্ত হয়ে যাবে।

রুটি ভাজা হলে ওই তাওয়ায় সামান্য পানি দিয়ে রুটিগুলো হালকা ভিজিয়ে নিতে পারেন ধীর্ঘ সময় নরম রাখার জন্য।

রুটি ভাজার পর একটি পাত্রে ভেজা কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রুটি রেখে দিলে রুটি নরম থাকবে।

অফিস বা বাচ্চাদের টিফিনে রুটি দিলে ভাজার সাথে সাথেই গরম রুটি ফয়েল পেপারে মুড়ে তারপর টিফিন বক্সে দিন। দুপুর পর্যন্ত আরামেই রুটি নরম থাকবে।

আটা সিদ্ধ করে রুটি বানালে সিদ্ধ করার আগে পানিতে  একটু তেল ও পরিমাণমত লবণ দিয়ে পানি ফুটিয়ে খামির/ডো বানান।

আটা গরম পানিতে দিয়ে খামির/ডো করার আগে ঢাকনা দিয়ে  ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন। খামির নরম/সফট হবে ও রুটি নরম হবে।

খামির/ডো করার জন্য হাত দিয়ে ভাল করে মথে নেয়ার মধ্যে রুটি নরম হওয়ার আসল ট্রিক রয়েছে। হাত দিয়ে কমপক্ষে ১০ মিনিট ভার করে মথে নিন।

গোল গোল পেরা/বল করার পর যেটা বেলবেন সেটা ব্যতিত সকল পেরা/বল ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন; না ঢেকে রাখলে ড্রাই হয়ে যাবে এবং রুটি ফাটাফাটা হয়ে যাবে।

বেলার সময় বেশি ময়দা দিয়ে বেলবেন না। বেশি ময়দা দিয়ে বেললে রুটি শক্ত হয়ে যায়।

বেলার পর বেশি সময় রুটি রেখে দিবেন না। বেলার পরপরই ভেজে ফেলুন।

রুটি ভাজার পর বাতাসে রাখবেন না; ড্রাই হয়ে যাবে।

রুটি ভাজার সময় তাওয়া সর্বদা গরম রাখুন ও উচ্চ তাপে অল্প সময় ভাজুন। ঠান্ডা তাওয়ায় ভাজলে ফুলে কম।

রুটি বেশি তাপে অল্প সময় ভাজতে হয়। বেশি সময় ধরে ভাজলে শক্ত হয়ে যাবে।

ভাজার পর রুটি পলিব্যাগ, ফয়েল পেপার, রেপিং পেপার বা এ জাতীয় দ্রব্য দিয়ে মুড়ে রাখুন; এতে বাতাশ প্রবেশ করবে না ও রুটি নরম থাকবে।

 



নবীনতর পূর্বতন